স্বাধীনতার প্রতি আকর্ষণ প্রকৃতিজাত। শুধু
মানুষ নয়। বন্য পশু-পাখিও বন্দী বা খাঁচায় নিরাপদ জীবনের চেয়ে অনিরাপদ মুক্ত জীবন পছন্দ
করে। তাই সুযোগ পেলেই সে খাঁচা থেকে পালিয়ে যায়। স্বাধীনতা অত্যন্ত ব্যাপক। বিদেশী
শাসন-শোষণই নয় স্বাধীন দেশেও মানুষ যখন তার অধিকার ভোগ করতে না পারে তখন বলে স্বাধীনতার
সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত। সব ধরনের শোষণ-বঞ্চনা ও নিপীড়নমুক্ত জীবন-যাপন এবং সকল মৌলিক
অধিকার ভোগ (খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের পাশাপাশি চলাফেরা ও মতপ্রকাশ) করার সুযোগকেই বলা
হয় স্বাধীনতার সুফলপ্রাপ্তি। আমরা সুদীর্ঘকাল বৃটিশদের অধীন ছিলাম; তারপর পাকিস্তানী
শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তিলাভের লক্ষ্যে এক রক্তক্ষয়ী লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন
করি স্বাধীনতা। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার লক্ষ্য ব্যক্ত
করতে যেয়ে দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের
সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।
মুক্তি বলতে দেশবাসী বুঝেছিল মানুষে-মানুষে
এবং অঞ্চলে-অঞ্চলেসহ সব ধরনের শোষণ-বঞ্চনা ও নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্ত এক আত্মসম্মানবোধ
জাতি হিসেবে তারা বসবাস করবে। পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার (চলাচল ও মত প্রকাশের অধিকার)
এবং জীবন, সম্পদ ও সম্মানের পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে জীবন-যাপনের গ্যারান্টি থাকবে। কিন্তু
প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আমরা সে প্রসঙ্গে না যেয়ে ইসলামিক
দৃষ্টিকোন থেকে স্বাধীনতার মর্ম ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
অপরের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করে প্রতিটি মানুষের
অধিকার রয়েছে স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তা-ভাবনা পোষণ, তা প্রচার এবং ভোগ করার। মানুষের
এই স্বাধীনতা বল্গাহীন বা নিয়ন্ত্রণহীন নয়। ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্রীয় নীতি-নৈতিকতা দ্বারা
এ স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত। যেমন একজন ব্যক্তি তার নিজ ঘরে উচ্চ আওয়াজে গান বা ওয়াজ শোনায়
অপরের বিরক্তির কারণ সৃষ্টি করলে সে স্বাধীনতা স্বীকৃত নয়। তাই স্বাধীনতা ভোগ করার
ক্ষেত্রে অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে অপরের অধিকার যেন ক্ষুণ্ণ না হয়।
ইসলাম স্বভাব-প্রকৃতির ধর্ম। প্রকৃতির
দাবীই হলো স্বাধীন ও মুক্ত জীবন। তাই দাসপ্রথা ইসলাম স্বীকৃত নয়। কোন স্বাধীন মানুষকে
দাসত্বে নিয়োজিত করা বড় বড় গুনাহসমূহের অন্যতম। মুহাম্মদ (সা)-এর সময়কালে সমাজে দাসপ্রথা
ছিল। তা থেকে দাসদের মুক্ত করার জন্য তিনি নানাবিধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন। দাসমুক্ত
কাজে প্রভূত ছওয়াব রয়েছে এবং তা গুনাহ মাফের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন। আল্লাহতায়ালা
যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে দাসমুক্ত কাজে সহায়তা করা একটি খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়াও দাসদের সাথে সদয় ব্যবহার এবং ‘নিজেরা যা খাবে
তাদেরকেও তাই খাওয়াবে, নিজেরা যা পরিধান করবে তাদেরকেও তাই পরিধান করাবে’ বলে সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সামাজিক কোন সমস্যা রাতারাতি পরিবর্তন না করে ক্রমান্বয়ে তা দূর করে তিনি সামাজিক শৃঙ্খলা
বজায় রেখেছেন। আল্লাহর রসূল (সা)-এর ঘরেও দাস ছিল এবং তিনি সেই দাসের সাথে এমন আচরণ
করে দেখিয়েছেন যে, দাস তার নিজ পিতা-মাতাকে পেয়েও নবী (সা)-কে ত্যাগ করতে রাজী হননি।
সেই দাস আর কেউ নন, তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী জায়িদ ইবনে হারিস (রা)।
স্বাধীনতার দাবী হলো প্রত্যেক মানুষ তার
মান-ইজ্জত-সম্মান এবং জীবন ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে জীবন যাপন করবে। রাষ্ট্র
ও সমাজ তার পূর্ণ গ্যারান্টি দিবে। মানুষকে গালি দেয়া, তাকে হেয় ও অপদস্থ করা, মারপিট
করা, গুম-খুন করা সবই কবীরা গুনাহ। আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চিত ধ্বংস
তাদের জন্যে যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে।’ একটু গালমন্দ
করা, আড়ালে একটু দোষ প্রচারের ফল যদি হয় নিশ্চিত ধ্বংস (হুতামায় নিক্ষেপ); তাহলে গুম-খুনের
পরিণতি কী হতে পারে?
ইসলাম মানুষের অবাধ চলাচল এবং তার রুটি-রুজি
তালাশের স্বাধীনতা দান করেছে। এ ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরী করা, দোষ-ত্রুটি
খুঁজে বেড়ানোটাও ইসলাম পছন্দ করে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী স্মরণ করতে হয়- ‘হে ঈমানদারগণ!
বেশি ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গুনাহ। দোষ অন্বেষণ
করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার
নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে
ভয় কর। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু’- সূরা হুজুরাত
১২। গোপন বিষয় খোঁজাখুঁজি করতে রসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন। কেউ যদি আড়াল থেকে কারো ঘরে
উঁকি মারে তবে তার চোখ ফুটো করে দেয়ার জন্য তিনি বলেছেন। দু’জন লোকের আলাপরত
অবস্থায় তৃতীয় জন তা শোনার চেষ্টা করাকে গুনাহ বলেছেন। বর্তমান যুগে অপরের চিঠি পড়া
বা মোবাইলে আড়িপাতা একই অপরাধ। এ সবই মানুষের স্বাধীনতা বা অধিকার হরণের উদাহরণ। অবশ্য
অপরাধী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে সবই বৈধ। অধিকার হরণ প্রসঙ্গে উমর (রাঃ)-এর একটি ঘটনা
উল্লেখ করা যায়। তিনি নাগরিকদের অবস্থা জানার জন্য ছদ্মবেশে বের হতেন। একদিন চলার পথে
এক বাড়ি থেকে গানের আওয়াজ শুনতে পান। তিনি দেয়াল টপকিয়ে দেখেন যে সেখানে নারী ও মদ।
তিনি লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন-তুই
কি মনে করেছিস যে, অপরাধ করবি আর কেউ তা টের পাবে না?’ লোকটি জবাবে
বলেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন,
তাড়াহুড়া করবেন না, আমি অপরাধ একটি করলে আপনি করেছেন তিনটি- (১) আল্লাহতায়ালা অন্যের
দোষ খুঁজতে নিষেধ করেছেন অথচ আপনি তাই করলেন, (২) আপনি সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে
দেয়াল টপকালেন, (৩) আপনি অনুমতি ছাড়াই গৃহে প্রবেশ করলেন।’ ওমর (রাঃ) লজ্জিত
হয়ে ফেরৎ আসলেন। ইসলামে এরই নাম স্বাধীনতা বা মানবাধিকার এবং তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
চৌদ্দ শ’ বছর পূর্বে।
৫৪ ধারায় কাউকে ধরে এনে আদালতে রিমান্ড চাওয়া এবং দোষ স্বীকারে বাধ্য করা মানবাধিকারের
সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বড় ধরনের জুলুম। ইসলামে বিচারের ক্ষেত্রে দু’টি প্রক্রিয়া
অবলম্বন করা হয়। প্রথমত. স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার অর্থাৎ অপরাধী অনুতপ্ত হয়ে আখিরাতের
শাস্তির পরিবর্তে দুনিয়ায় শাস্তি গ্রহণে প্রস্তুত হওয়া এবং এমতাবস্থায় আখিরাতের শাস্তি
থেকে সে রেহাই পেয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত. দু’জন সাক্ষীর প্রদত্ত
সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে (ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে চারজন)। কোন অপরাধীকে তার নিজের বিরুদ্ধে
সাক্ষ্যদানে বাধ্য করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই।
নিজে স্বাধীনতা ভোগের সাথে সাথে অপরের
স্বাধীনতা বা অধিকারের স্বীকৃতি দান ইসলামেরই দাবী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল
মানুষের জীবন-সম্পদ ও সম্মান সমান গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর নবী (সা) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায়
যুদ্ধরত একজন মুজাহিদকে হত্যা করা ও একজন অমুসলিমকে হত্যা করা সম অপরাধ। মান-ইজ্জত-সম্মানের
উপর সামান্য আঘাতও কবীরা গুনাহ। সকলের সাথে সদাচরণ ইসলামের দাবী। নবী মুহাম্মদ (সা)
বলেছেন, ‘যারা বড়দের সম্মান
ও ছোটদের স্নেহ করে না তারা আমাদের সমাজভুক্ত নয়’। মানুষের প্রতি
সামান্য সম্মানবোধের অভাব যদি মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া হয় তাহলে যারা মানুষের
স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করে তাদের পরিণতি কী হবে?
মানুষের মৌলিক প্রয়োজন (খাদ্য, বস্ত্র,
বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) পূরণের দাবী মেটানো রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। একটি
স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ তার নাগরিকদের এ সব মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গ্যারান্টি প্রদান
করে। তাইতো খলিফা ওমর (রা)-কে বলতে হয়েছিল- ‘মানুষ কেন ফোরাত
কূলে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তাহলে ওমরকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে’। যোগ্যতার ভিত্তিতে
কর্মসংস্থান (সরকারি চাকুরি) এবং স্বাধীন ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ দাবী করাও
নাগরিকের অধিকার। সেখানে রাষ্ট্র বা সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা দুর্নীতি
কাম্য নয়।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে মানুষের কল্যাণের
জন্য। মানুষ যাতে নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য রাষ্ট্র বা সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা
অবলম্বন করে। মানুষের স্বাধীন চলাফেরা ও কর্মকান্ডে যাতে কেউ ব্যঘাত না ঘটাতে পারে
সেজন্য রয়েছে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রাষ্ট্রের এই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শান্তি
ও নিরাপত্তার প্রতীক। অপরাধী ভয় করলেও শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদেরকে স্বস্তির কারণ হিসেবে
জানবে এবং তারা জনগণের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় হবে সিক্ত। তারা সমাজ থেকে অপরাধ
নির্মুল করবে, মিথ্যা দূর করবে এবং মানুষ সর্বদাই তাদের থেকে ভালোটাই আশা করবে। ইউরোপ-আমেরিকার
গণতান্ত্রিক দেশসমূহ তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বন্ধু এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক
হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ইসলাম দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মর্যাদার উচ্চাসনে আসীন করেছে।
রসূল (সা)-এর ঘোষণা-‘দু’টি চোখকে জাহান্নামের
আগুন দগ্ধ করবে না-এক. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ থেকে অশ্রু ঝরে এবং দুই. যে চোখ জনগণের নিরাপত্তা
বিধানে বিনিদ্র যাপন করে’। ইসলাম দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর জান্নাতে যাওয়ার পথটাকে সহজ করে দিয়েছে। যদি বিপরিত হয় তাহলে জাহান্নামই হবে
তাদের ঠিকানা।
জনগণের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত
করার দায়িত্ব সরকারের। একটি সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের সার্বভৌমত্ব
রক্ষা ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা। এর অন্যথা করার কোন সুযোগ নেই। দেশে
সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সরকার ও তার অধীন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর
মর্যাদা অতি উচ্চে এবং আখিরাতে আরশের ছায়া ছাড়া যখন আর কোন ছায়া থাকবে না, সেই ছায়ায়
আশ্রয়প্রাপ্তদের অন্যতম হবে ন্যায়পরায়ণ শাসক। আর এর বিপরিত যারা তাদের পরিণতি হবে বড়
ভয়াবহ, অকল্পনীয়। রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি জুলুমের বদলা শাসককে প্রদান করতে
হবে এবং এর পরিণতি জাহান্নাম বৈ আর কিছু নয়।
রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিচার
বিভাগ। শাসক ও বিচারকরা আল্লাহরই প্রতিনিধি। তাদের কাছ থেকে মানুষ কেবল ন্যায়টাই আশা
করে। বিচার বিভাগ নির্ভয়ে ও সকল প্রকার পক্ষপাত মুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন না করতে পারলে
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না থাকলে মানুষের স্বাধীনতা
ও অধিকার ভুলুণ্ঠিত হতে বাধ্য। বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষ্যদানে সততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সত্য সাক্ষ্য গোপন করা যেমন অপরাধ তেমনি মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা আর মুসলিম থাকতে পারে না;
সে হয়ে পড়ে একজন মূর্তিমান মুনাফিক। বিচারের সাথে সংশ্লিষ্টদের সততা যেমন তাদেরকে জান্নাতে
পৌঁছে দিবে, তেমনি অসততা তাদেরকে জাহান্নামের অতল তলে নামিয়ে দিবে। অপরাধী পালিয়ে গেলেও
কোন নিরপরাধী যেন শাস্তি না পায় সেটা বিচারের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, ইসলামের দাবীও তাই।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
ন্যায়বিচার প্রাপ্তি একজন মানুষের অধিকার। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, বিনাবিচারে আটক,
রিমান্ডে নির্যাতন চালানো সবই ন্যায়বিচার পরিপন্থী এবং মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার
হরণেরই নামান্তর। এটা একটি বর্বর সমাজ ও দেশেরই পরিচায়ক।
বর্তমানে সমাজে দাসপ্রথা চালু না থাকলেও
সমাজে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণিকে দাসের মতই জীবন-যাপন করতে হয় এবং সকল ধরনের জুলুম
ও অবিচার তারা নীরবে সহ্য করে। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী বৈ আর কিছু নয়। ইসলামের
দৃষ্টিতে সকল মানুষ আদমের সন্তান এবং মর্যাদাগতভাবে সবাই সমান। কারো প্রতি জুলুম একটি
বড় গুনাহ এবং অফিসে বা বাসায় বা কারখানায় যারা আমাদের দৃষ্টিতে ছোট কাজ করে তারাই সাধারণত
জুলুমের শিকার ও অধিকার বঞ্চিত হয়। আজ শক্তিমানের ভয়ে মানুষ তটস্থ এবং তারা মান-ইজ্জত-সম্মান
নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রাখে এ বোধ-উপলব্ধিও তারা ভুলে গেছে ও শক্তিমানরাও তাদের মানবিক
অধিকার স্বীকার করতে চায়না।
স্বাধীনতার সাথে সুশাসনের সম্পর্ক বড় গভীর।
দেশে সুশাসন না থাকলে মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহপাক ও জনগণের
কাছে জবাবদিহির অনুভূতি না থাকলে সুশাসন কায়েম সম্ভব নয়। জনগণের সমর্থনপুষ্ট সরকার
সাধারণত দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়। সরকার গঠনে স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করা জনগণের
মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে সরকার স্বৈরাচারী হতে বাধ্য; তখন জোরপূর্বক
ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে নির্যাতনমূলক পন্থা গ্রহণ করে এবং জনগণ স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার
থেকে বঞ্চিত হয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সুশাসনের অভাবে শাসক
ও শাসিতের মাঝে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের বড় অভাব এবং সীমাহীন দুর্নীতির কারণে জনস্বার্থ
চরমভাবে ব্যহত হয়। আস্থাহীনতার কারণে উন্নয়নশীল দেশসমূহে রাজনীতিক অস্থিরতা সব সময়
বিরাজমান। এ সমস্যা কোন বিশেষ দেশের নয় বরং সামগ্রিক বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এ সমস্যা
প্রকট। ফলে উন্নত বিশ্ব খবরদারী করার সুযোগ পায় এবং কার্যত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের
বশ্যতা স্বীকার করেই চলতে হয়। অনেক সময় আক্ষরিক অর্থে দেশের স্বাধীনতাই বিপন্ন হয়ে
পড়ে। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস তখনই সম্ভব যখন রাজনীতিক দলগুলো উদার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন
হবে এবং পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে একে অপরকে ভালোবাসতে পারবে। একটি দেশের
জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ একান্তভাবে নির্ভর করে রাজনীতিক দলগুলোর আচার-আচরণ,
দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকলাপের উপর। স্বাধীনতার সুফল ভোগের লক্ষ্যে দেশে একটি স্বস্তির
রাজনীতি এবং অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন করে উদার রাজনীতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠার প্রত্যাশা
আমরা করি।
Comments
Post a Comment