উম্মাহর
ঐক্য বিনষ্ট করা কুফুরি এবং পরিণতি জাহান্নাম।
আল্লাহতায়ালার লক্ষ-কোটি সৃষ্টির মধ্যে মানুষই হলো সেরা। সেই মানুষের
মধ্যে বর্ণ-ভাষা-চেহারা-আকার-আকৃতিতে রয়েছে সাংঘাতিক ভিন্নতা। আবার আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ
ও মেজাজেও রয়েছে ভিন্নতা। বিশ্বাস ও কর্মেও সব মানুষ এক নয়। এ সব ভিন্নতা দিয়ে আল্লাহতায়ালা
সাজিয়েছেন এ মানবসমাজকে। আল্লাহ চাইলে সব মানুষকে এক করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি
তা করেননি। এই ভিন্নতার মধ্যেই রয়েছে সৌন্দর্য। এত সব পার্থক্য থাকার পর আল্লাহতায়ালার
কাছে তারাই উত্তম যারা নীতিবান অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে চলে। ঈমান ও আমলের দিক থেকে
মানুষকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। এক. মুসলিম (অনুগত), দুই. কাফির (অমান্যকারী)। ইসলাম
ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য চিরন্তন এবং তারা একে-অপরের শত্রু (এ শত্রুতা আদর্শিক, আচার-আচরণ
ও লেন-দেনে নয়)। ইসলামের বিরুদ্ধে সকল কুফুরিশক্তি একাট্টা। তার মোকাবেলায় ইসলামের
পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-‘মু’মিনরা
পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন
হয়ো না’। আবার বলেছেন-‘মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের
মধ্যে পরস্পর রহমদীল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির
আখ্যায়িত করে সূরা আলে ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে
এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন
করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু
লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত
লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির
বিনিময়ে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের
আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে
শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই’-সূরা আলে
ইমরান ১০৫-১০৮।
আল্লাহতায়ালা আরো বলেন-
‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে
ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই
তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত’-সূরা মু’মিনুন ৫২-৫৩।
আল্লাহর বাণী-
‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত
হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত। আল্লাহ তাদেরকে
তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন’-সূরা আন’আম ১৫৯।
আল্লাহর রসূল (সা.)-এর কঠোর হুশিয়ারী-
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, রসূল (সা.) বলেন-‘ইসরায়েল সন্তানগণ
৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। এদের মধ্যে সকলেই জাহান্নামী,
একটি মাত্র দল বাদে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন : হে আল্লাহর রসূল (সা.), এ মুক্তিপ্রাপ্ত
দলটি কারা? তিনি বলেন-আমি এবং আমার সহাবীগণ এখন যার উপর আছি’-তিরমিযী।
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস বা আকিদা এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ আল্লাহ, রসূল, কিতাব,
আখিরাত, ফেরেশ্তা ও তকদীরের প্রতি বিশ্বাস এনেই একজন ব্যক্তিকে মু’মিন হতে হয়। বিশ্বাসের
সাথে সাথে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূল (সা.) যে সব বিষয় অত্যাবশ্যকীয় (ফরজ) করেছেন সে
সব পালনের মাধ্যমে সে হয় মুসলিম (অনুগত)। উম্মাহর মধ্যে এ নিয়ে কোন মতপার্থক্য নেই।
কুরআন মজিদে নানাভাবে তার বর্ণনাও রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে-‘কেউ যদি তাওবা করে এবং নামায
কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে তাহলে সে তোমার ভাই’। রসূল (সা.) এক বেদুইন যুবককে বিশ্বাসের
সাথে নামায, রোযার স্বীকৃতির (যোগ্যতার ভিত্তিতে) মাধ্যমে বলে দিলেন সে যদি তার কথায়
আন্তরিক হয় তাহলে সে জান্নাতি। কুরআন ও হাদিসের আলোচনায় বোঝা যায় কিয়ামতের দিন একজন
ব্যক্তিকে তার ঈমান ও ফরজ-ওয়াজিব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। সুন্নাত-মুস্তাহাব পরিপূরক
হিসেবে কাজ করবে। আল্লাহ বলেছেন-‘তোমরা বড় বড় গুনাহ থেকে বিরত থাক, তাহলে ছোট গুনাহসমূহ
আল্লাহ এমনিতেই মাফ করে দেবেন’। বড় গুনাহর অর্থই হলো ফরজ লঙ্ঘন। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত
আদায় না করা, সুদ-ঘুষ, যিনা-ব্যাভিচার, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও আমানতে খেয়ানত, ওজনে
কম-বেশি, ধোকা-প্রতারণা সবই ফরজ লঙ্ঘন ও পরিণতি জাহান্নাম। এ সব অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে
কাফির বলে তেড়ে আসতে কাউকে দেখা যায় না বা এ ব্যাপারে কোন ফতোয়াও অত দৃষ্টিগোচর হয়
না। (অবশ্য কবিরা গুনাহ করলেই কেউ কাফির হয়ে যায় না, বরং কেউ যদি অস্বীকার করে তবেই
কাফির হয়ে যায়) কিন্তু আমিন জোরে না আস্তে, হাত বুকের ওপর না নিচে, ইফতার সঙ্গে সঙ্গে
না একটু পরে-এ সব নিয়ে ফেসবুকেসহ নানা জায়গায় দেখা যায় অনেক বিতর্ক এবং একে অপরকে প্রচন্ডভাবে
আক্রমণ করে। রসূল (সা.)-এর সুন্নাত মনে করে যে কেউ হুবুহু অনুসরণ করলে অনেক ছাওয়াবের
অংশীদার হবেন, কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সব নিয়ে কাউকে গালি দিলে, কটাক্ষ করলে এবং
দলাদলি করলে কুফুরিতে লিপ্ত হবে, সেটাও মনে রাখতে হবে। রসূল (সা.) যেটা করেননি সেটাকে
ইবাদত মনে করে করা (বিদয়াত) পরিহার করে সুন্নাত-মুস্তাহাবের অনুসরণে ভিন্নতায় কোন দোষ
নেই। এ আল্লাহরই হেকমত। এ সব ভিন্নতা সত্ত্বেও উম্মাহর মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে উঠবে-এটাই
আল্লাহতায়ালার অভিপ্রায়। মুসলিম উম্মাহ সর্বসম্মতভাবে যাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করেছে
(যেমন-কাদিয়ানী) তাদের বাদে আহলে হাদিসসহ চার মাযহাব এবং যারাই ইসলামের মৌলবিশ্বাস
ও ফরজ-ওয়াজিব মেনে চলে বা চলতে প্রস্তুত সবাই সত্যাশ্রয়ী ও হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। দলাদলি
না করে সবার প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ ঈমানেরই পরিচায়ক।
বর্তমান মুসলিম বিশ্বে শিয়া-সুন্নি বিরোধ উম্মাহর জন্য বড় বেদনাদায়ক।
এই ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্ব মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য
ইসলামী স্কলারদের এগিয়ে আসার দরকার। শিয়া মতবাদের উদ্ভব হয়েছিল মূলত রাজনীতিক কারণে।
আল্লাহর রসূল (সা.) ইন্তেকালের পর কে খলিফা হবেন এ ইস্যুতে কিছুটা মতপার্থক্য সৃষ্টি
হলেও আবু বকর (রা.)-কে সর্বসম্মতভাবে সবাই মেনে নেন এবং পরবর্তি দুই খলিফাকে মেনে নেয়ার
ক্ষেত্রে আলী (রা.)সহ কারোরই আপত্তি ছিল না। উছমান (রা.)-এর শাহাদত ও তাঁর বিচার নিয়ে
উম্মাহর মধ্যে সৃষ্টি হয় বিরোধ যা চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)-কে উম্মাহর সর্বসম্মত
খলিফা মানার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আলী (রা.) পূর্ববর্তি তিন খলিফাকে মেনে তাঁদের
অধীনে দায়িত্বও পালন করেছেন। যারা সুন্নি বলে পরিচিত তারা চার খলিফাকেই সমভাবে মানেন
এবং ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য করেন না। নবী (সা.)-এর বংশ হিসেবে
আলী (রা.) এবং ফাতিমা (রা.) ও তাঁদের উত্তরসূরীদেরকে প্রধান্যদান দোষের কিছু নয়। কিন্তু
অন্যদেরকে দোষারোপ করা (গীবৎ) ও হেয় করা অবশ্যই নিন্দনীয় ও গুনাহের কাজ। বংশ-মর্যাদা
অস্বীকার করার মত নয়। আল্লাহ নিজেও স্বীকৃতি দিয়েছেন-‘আল্লাহ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর
ও ইমরানের বংশধরকে সমগ্র বিশ্ববাসীর ওপর প্রাধান্য দিয়ে (তাঁর রিসালাতের) জন্য মনোনীত
করেছিলেন’। মজার ব্যাপার হলো আমরাতো সবাই আদম ও নুহেরই বংশধর। বর্তমান বিশ্বে বংশীয়
মর্যাদার প্রধান্য লক্ষণীয়। সমমর্যাদার অধিকারী দু’জনের মধ্যে নবীর বংশকে অগ্রাধিকার
দেয়া যেতে পারে। কিন্তু তাকওয়া ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে শ্রেষ্ঠতম কাউকে বাদ দিয়ে স্রেফ
বংশপূজা রসূল (সা.) থেকে স্বীকৃত নয়। সকল সাহাবায়ে কেরাম ও ঈমানদারদের প্রতি আমাদের
সুধারণা রয়েছে এবং নবী (সা.) পরিবারের প্রতি বিশেষ করে হাসান (রা.)-হুসাইন (রা.) ও
তাঁদের পরিবারের প্রতি যে জুলুম হয়েছে সেজন্য তাঁদের প্রতি আমাদের বাড়তি ভক্তি-শ্রদ্ধাও
রয়েছে। আমরা তাঁদেরকে জান্নাতের সর্দার হিসেবেই জানি এবং খুতবায় তাঁদের প্রতি সমভাবে
শ্রদ্ধা প্রকাশ করি। কিন্তু শিয়াদের মধ্যে কিছু বাড়াবাড়ির কারণেই আজ উম্মাহর এ দুরাবস্থা।
যেটা ছিল স্রেফ রাজনীতিক একটা ইস্যু পরবর্তীতে সেটাকে (আলী রা. ও তাঁর বংশের ইমামতের
সাক্ষ্যদান) তারা তাদের আকিদায় অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে যা কোনক্রমেই কুরআন-সুন্নাহ
সমর্থিত নয়। বর্তমান শিয়াগণ নানা দল-উপদলে বিভক্ত। এর মধ্যে দ্বাদশ-ইমামপন্থী শিয়াগণ
সংখ্যাগরিষ্ঠ (ইরান, ভারত, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের)। শিয়াদের বিশ্বাস মতে দ্বাদশ
ইমাম মুহাম্মদ মাহদী ইবনু হাসান আসকারী (রহ.) ২৫৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করে পরে নিরুদ্দেশ
হয়ে যান এবং গোপনে থেকে জগত পরিচালনা করছেন। তিনি অচিরেই মাহদীরূপে আত্মপ্রকাশ করে
সারা বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। এই বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই এবং
এটা তাদের মনগড়া একটা আকিদা। শিয়াদের মধ্যে সুন্নীদের কাছাকাছি মতের ফিরকা হলো যাইদিয়্যাহ
শিয়াগণ। বর্তমানে ইয়ামানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই মতের। যাইদ (রহ.) ছিলেন ১২ ইমামপন্থী
শিয়াগণের তৃতীয় ইমাম যাইনুল আবিদীন (রহ.)-এর পুত্র এবং ৪র্থ ইমাম মুহাম্মদ বাকিরের
(রহ.) ভাই। তিনি একজন বড় আলিম ছিলেন এবং বিশ্বাস ও কর্মে আহলুস সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত
ছিলেন। ইমাম আবু হানিফাসহ সকল প্রসিদ্ধ তাবিয়ী-তাবি-তাবিয়ী তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। উমাইয়া
শাসকদের সাথে যুদ্ধ করে ১২২ হিজরীতে তিনি শহীদ হন। তাঁর অনুসারীরা (যাইদিয়্যাহ শিয়াগণ)
বিশ্বাস করেন-
# ইমামত বা রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য ফাতিমা (রা.)-এর বংশধররা অগ্রাধিকার
পাবে।
# ইমামত বা রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য ওহীর বা পূর্ববর্তী ইমামের সুস্পষ্ট
নির্দেশের প্রয়োজন নেই। বরং ফাতিমা (রা.)-এর বংশের যে কোন ব্যক্তির মধ্যে যোগ্যতা থাকলে
এবং জনগণ নির্বাচিত করলে তিনি ইমাম হবেন।
# ফাতিমা (রা.)-এর বংশের যোগ্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে অন্য বংশের মানুষ
বা কম যোগ্য লোক খলিফা হলেও তা বৈধ হবে।
# সাহাবীদেরকে গালি না দেয়া এবং পূর্ববর্তী তিন খলিফার খিলাফতে আস্থা।
# ইমাম গুপ্ত বা লুক্কায়িত থাকতে
পারেন না।
# নবীদের মত ইমামগণের ইসমাতে
বিশ্বাস স্থাপনের প্রয়োজন নেই। তবে কেউ কেউ আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রা.) এ চারজনের
ইসমাতে বিশ্বাস করেন।
# ফিকহী বিষয়ে হানাফী ফিকহের
সাথে তাদের অনেক মিল রয়েছে।
প্রভাবশালী শিয়া ফিরকার মধ্যে ইসমাঈলীয়া শিয়াগণ অন্যতম। ৬ষ্ঠ ইমাম জাফর
সাদিকের পরে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র মুসা কাজিম (১৮৩ হিজরী) ইমামতি লাভ করেন। কিন্তু ইসমাঈলীয়া
শিয়াগণ বিশ্বাস করেন যে জাফর সাদিকের পর তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র ইসমাঈল ছিলেন (১৪৮হি) প্রকৃত
ইমাম। এ ছাড়াও ভারতীয় বুহরা শিয়া, সিরিয়ার শাসক নুসাইরী বা আলাবী শিয়া এবং লেবানন ও
ফিলিস্তিনে দুরুয্ সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য। শিয়াগণ অনেক দল-উপদলে (২২ ফিরকায়) বিভক্ত এবং চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস ও
কর্মে একে অপর থেকে অনেক দূরে। রেসালাতের সাক্ষ্যদানের সাথে আলী (রা.) ও তাঁর বংশের
ইমামতের সাক্ষ্যদানকে ঈমানের শর্ত থেকে বাদ দিলে (যা যাইদিয়্যাহ শিয়াগণ বিশ্বাস করেন
না) এবং পূর্ববর্তী তিন খলিফা ও সাহাবায়ে কেরামদের মন্দ বলা থেকে বিরত থাকলে শিয়া-সুন্নী
বিরোধ দূর হতে পারে।
ফিকহী বিষয়ে উম্মাহর মত-পার্থক্য শ্রদ্ধার সাথে মেনে নিয়ে নিজের বিবেক-বুদ্ধি
ও ইলমের ভিত্তিতে যে কোন মত অনুসরণ করলে কোন সমস্যা নেই। কারণ মৌল বিশ্বাস ও ফরজ-ওয়াজিব
পালনের ক্ষেত্রে মতের কোন ভিন্নতা নেই। ঈমানের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো
নামায। ইমামের আনুগত্যের একটা সীমা আমরা নামায থেকে পাই। নামাযে ইমাম সাহেব ফরজ লঙ্ঘন
করলে নামায পুনরায় আদায় করতে হয়; ওয়াজিব ছুটে গেলে সহু সেজদা দিয়ে সংশোধন করে নেয়া
হয়। কিন্তু এর পরে সুন্নাত-মুস্তাহাবের ভুলকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যে সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
বিষয় নিয়ে উম্মাহর মধ্যে মত-পার্থক্য ও দলাদলি নামাযে তা সযত্নে এড়িয়ে চলা হয়েছে। আল্লাহর
রসূল (সা.) তাঁর উম্মাতকে নামাযের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কে এড়িয়ে চলার জন্য
এত বড় তালিম দেয়ার পরও মত-পার্থক্য করে উম্মাহর শক্তি নষ্ট করা থেকে আমরা বিরত হচ্ছি
না। এটা আমাদের জন্য বড় দুর্ভাগ্য। ইসলামের দুশমনরা আমাদের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে আজ
ভ্রাতৃঘাতি দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে মজা লুটছে, অথচ আমাদের চৈতন্য আসছে না। অনৈক্যের কারণে
আজ দুনিয়াতে আমরা ভোগ করছি সীমাহীন জিল্লতি-আখিরাতে রয়েছে আরো ভয়াবহ পরিণতি। ইসলামের
দুশমনদের মোকাবেলায় কালেমাবিশ্বাসী (ইসলামের পক্ষে) সকল মুসলিমের ঐক্য আজ অপরিহার্য
হয়ে পড়েছে-আল্লাহতায়ালা আমাদের মধ্যে এ উপলব্ধি দান করুন। আমিন। ২৬/০৭/২০১৫
Comments
Post a Comment