জুমাতুল
বিদা (১৭/০৭/২০১৫)
কুচিয়ামোড়া বাজার জামে মসজিদে বক্তব্য
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
সম্মানিত ইমাম সাহেব ও মুসল্লীবৃন্দ। আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মাসের সেরা রমযান এবং বারের সেরা জুমাবার। পবিত্র রমযান মাসে আমরা ৫টা
জুমাবার পেলাম। আলহামদু লিল্লাহ। আমরা যারা রোযাবস্থায় জুমার নামায আদায় করছি-বিশ্বাস
করি যে আমরা সবাই বেগুনাহ হয়ে জান্নাতের উপযুক্ত হয়ে পড়েছি। আলহামদু লিল্লাহ। সন্দেহ
করার কোন কারণ নেই। কারণ কথাটি আমার নয়-ঘোষণাটি আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
(সা.)-এর। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা-যারা ঈমান ও এহতেছাবের সাথে রোযা রাখবে আল্লাহ তাদের অতীতের
সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। হ্যাঁ-আমাদের প্রিয়তম নবীর ঘোষণায় আমাদের পূর্ণ ঈমান রয়েছে
এবং যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ রোয়া ফরজ করেছেন, সে ব্যাপারেও আমরা সচেতন। আমরা আমাদের আচার-আচরণ,
চাল-চলন, কাজে-কর্মে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলবো ইনশা-আল্লাহ। আগামীকাল আমাদের
ঈদ-ঈদুল ফিতর-রোযা ভাঙ্গার আনন্দ। আল্লাহ আমাদের ওপর দীর্ঘ একটা মাস রোযা রাখার মাধ্যমে
গুনাহ মাফের যে সুযোগ করে দিয়েছেন-সে আনন্দেরই তো বহিপ্রকাশ এ ঈদ। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়
সবাই ঈদগাহ মাঠে সমবেত হয়ে আল্লাহরই বড়ত্ব ঘোষণা করে আমরা সেজদাবনত হব। আমরা সব ভেদাভেদ
ভুলে যাব। কোন হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কলহ নেই, অকল্যাণ কামনা নয়, শুধুই পরস্পরের কল্যাণ
কামনা। ঈদগাহ মাঠে এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। উম্মাহর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার এক কার্যকর
বিধান দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সাপ্তাহিক জু’মার নামায ও বছরে দুটি ঈদ। ঈদে মানুষ
দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে এসে নিজ এলাকায় এবং ঝালাই করে নেয় আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
পারস্পরিক সম্পর্ককে ঘনিষ্ট করার কত বড় চমৎকার ব্যবস্থাপনা দান করেছেন আমাদের প্রিয়তম
নবী (সা.)।
আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার জন্য তিনি তাঁর বান্দাহদেরকে
বলেছেন। মানুষের দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি হবে না-এটা মানব প্রকৃতি নয়। ভুল হওয়া খুবই
স্বাভাবিক। সৃষ্টির প্রথম মানুষকে দিয়ে তিনি দেখিয়েও দিয়েছেন। ইবলিসকে বলে দেয়া হলো
আদমকে সেজদা করতে এবং আদমকে বলা হলো গাছের নিকটেও না যেতে। উভয়ই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য
করলেন। পার্থক্য হলো ইবলিস ভুলকে স্বীকার না করে গর্ব ও অহঙ্কারে মেতে উঠলো। পক্ষান্তরে
আদম (আ.) তাৎক্ষণিক ভুল স্বীকার করে প্রভূর দরবারে ক্ষমা চাইলেন। আল্লাহও তাঁকে ক্ষমা
করে দিলেন এবং শুধু ক্ষমাই নয় নবুয়তি দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করলেন। মানুষ পাপ করে যখন
তাওবা করে অর্থাৎ ফিরে আসে তখন সে আর পূর্বে কৃত অপরাধের জন্য শাস্তিযোগ্য থাকে না।
মানুষকে শাস্তিদানের জন্য আল্লাহ কোন বাহানা তালাশ করবেন না, বরং বান্দাহকে ক্ষমা করার
জন্য আল্লাহ উন্মুখ হয়ে আছেন। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস আপনাদেরকে শোনাতে চাই। মরুভূমিতে
এক লোক উটসহ এক গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুম থেকে জেগে দেখে তার উট নেই। এ অবস্থায়
নিশ্চিত মৃত্যু জেনে সে হতাশ হয়ে আল্লাহকে ডাকতে থাকে এবং ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায়
তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে দেখে তার উটটি পাশে দন্ডায়মান। সে খুশির
জোটে বলে বসে পরোয়ারদেগার-তুমি আমার গোলাম এবং আমি তোমার মনিব। তেমনি আল্লাহর কোন গোনাহগার
বান্দাহ গোনাহ থেকে ফিরে এসে যখন আল্লাহর পথ ধরে তখন আল্লাহর খুশির সীমা থাকে না। এই
যখন আমাদের পরম ক্ষমাশীল ও করুণাময় আল্লাহতায়ালার অবস্থা তখন কেন আমরা অন্ধকারে হাতড়িয়ে
মরবো এবং দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনটা ধ্বংস করে দেব। তাই আসুন, অতীতকে ভুলে গিয়ে নতুন
পথচলা শুরু করি। আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত যত নাফরমানি হয়েছে (নামায-রোযা-যাকাত আদায়
না করার গুনাহ) তাওবা করে যথারিতি আদায়ের মাধ্যমে সব মাফ করে নিই। আর বান্দাহর সাথে
সম্পর্কিত অপরাধ আমরা চেষ্টা করি বান্দাহর সাথে মিটিয়ে ফেলতে এবং সম্ভব না হলে আল্লাহর
কাছে তাওবা করে তাদের জন্য মাগফেরাত চাই। আল্লাহর পক্ষে খুবই সম্ভব যে, আমরা যদি তাঁর
কৃতজ্ঞ বান্দাহ হয়ে পড়ি তাহলে আল্লাহ আমাদের পক্ষে তাঁর সেই বান্দাহর পাওনা পরিশোধ
করে দেবেন। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে ওয়াসওয়াসা দেয় যে ৪০/৫০ বছর নামায-রোযা
নেই, হালাল-হারামের বাছ-বিছার নেই; আর এখন ভালো হলে কি হবে? শয়তানের এ ধোঁকা-প্রতারণা
নস্যাত করে দিয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। তাই রসূল (সা.)-এর ঘোষণায় পূর্ণ আস্থা
রেখে পাপ-পঙ্কিল পথ পরিহার করে আমাদের নতুন পথচলা শুরু করতে হবে। হ্যাঁ, আমরা যদি তা
পারি তাহলেই আমাদের রোযা স্বার্থক হবে এবং আমরা নাজাতের উপযুক্ত হতে পারবো। আল্লাহ
আমাদেরকে তাওবা করে তাঁর পথে চলায় সাহায্য করুন। আমিন। ২২/০৭/২০১৫ (ঈষৎ পরিবর্তিত)
Comments
Post a Comment