Skip to main content

আত্মীয়তার হক


পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ী, ভাই-বোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালাসহ নিকটজনের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা প্রকৃতিজাত। ফিতরাতের ধর্ম ইসলাম আত্মীয়তার এ বন্ধনকে খুবই মূল্যায়ন করে। আত্মীয়তার দাবী নিয়েই মানুষ পরস্পরে বিপদাপদে এগিয়ে আসে ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে, আবার অপরের সাথে ঝগড়া-বিবাদেও জড়িয়ে পড়ে। সকল ধর্ম ও সকল যুগে এটা সত্য হিসেবে দেখা দেয়। ইসলাম অবশ্য ন্যায়-অন্যায় উপেক্ষা করে অন্ধভাবে সমর্থন বা বিরোধীতার পক্ষপাতি নয়। ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে ইসলাম বংশ, গোত্র, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, দেশ, জাতি সকল কিছুর উর্দ্ধে। একটি নির্দ্দিষ্ট সীমার মধ্য ইসলাম আত্মীয়তার দাবীকে খুবই গুরুত্ব প্রদান করে। এখানে আমরা আত্মীয়তার হক নিয়ে আলোচনা করবো।
আত্মীয়তা দু’দিক থেকে দেখা দেয়। এক. রক্তসম্পর্ক এবং দুই. বৈবাহিক সম্পর্ক দ্বারা। দু’ভাবেই আত্মীয়তার এ সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বের দাবী রাখে। ইসলামের দৃষ্টিতে হক দু’ধরনের। এক. আল্লাহর হক দুই. বান্দার হক। বান্দার হক আত্মীয়তার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পায়। সর্বাধিক গুরুত্বের দাবীদার পিতা-মাতা এবং এরপর নিকটতম আত্মীয়-স্বজন, দূরবর্তী আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিসহ সব ধরনের লোকজন। একটি ইসলামী সমাজ যে সব মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠবে সূরা বনি ইসরাইলে উল্লেখিত ১৪টি মূলনীতির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় উল্লেখ রয়েছে ১. আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না, ২. পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো এবং ৩. আত্মীয়-স্বজনকে তাদের পাওনা আদায় করে দাও, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদেরকেও। আল্লাহতায়ালার বলার ভঙ্গি হলো আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের পাওনা (আমাদের দান নয়) আদায় করে দাও। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন-‘তোমাদের সম্পদে বঞ্চিতদের হক রয়েছে’। আল্লাহর রসূল (সা.) নিজে যেমন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন, তেমনি তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নানাভাবে এব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন-‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না’। তিনি আরো বলেছেন-‘কেউ যদি রুজির প্রশস্ততা ও হায়াত বাড়াতে চায়, তাহলে সে যেন তার গরীব আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচারণ করে’।
দ্বায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে যারা কাজ করেন আত্মীয়তার সম্পর্ক মজবুত করা তাদের জন্য খুবই জরুরী। রসূল (সা.)-এর দাওয়াতে যাঁরা সাড়া দিয়েছেন তাঁরা প্রায় সকলেই ছিলেন তাঁর নিকটতম আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব। দাদা আব্দুল মুত্তালিবসহ বনু হাশিম গোত্রের  অনেকে ইসলাম কবুল না করেও রসূল (সা.)-এর জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করেছেন। অবশ্য ব্যতিক্রমও ছিল। আর তা হলো আপন চাচা আবু লাহাব। তার এই ভিন্নধর্মী আচরণের কারণেই কুরআন মজিদে একজন মাত্র পাপিষ্ঠের নাম উল্লেখ করে নিন্দাবাদ করা হয়েছে, আর সে হলো আবু লাহাব। তাই আমাদের সবারই উচিৎ নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সকল আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার। এ জন্য দরকার উত্তম ব্যবহার, খোঁজ-খবর নেয়া, আসা-যাওয়া করা, বিপদাপদে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা এবং উপহার-সামগ্রী আদান-প্রদান করা। হাদিসের ভাষায় আত্মীয়তার হক আদায় বলতে উত্তম ব্যবহারের বিনিময়ে উত্তম ব্যবহারই নয় বরং কেহ খারাপ ব্যবহার করলে তার সাথে উত্তম ব্যবহার করাটাকেই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন যাদের জীবনের লক্ষ্য তাদের পক্ষে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা মোটেই কঠিন নয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সর্বাবস্থায় তাঁর বান্দাহদের সাথে বিশেষ করে আত্মীয়দের সাথে সর্বোত্তম আচরণের তাওফিক দান করুন। আমিন। ০৯/০৬/২০১৫


Comments