মৃত্যু
সবার জীবনে সত্য। আস্তিক-নাস্তিক বা মু’মিন-কাফির কেউ
তা অস্বীকার করে না। সবাই দেখছে প্রতিনিয়ত তাদের প্রিয়জন তাদের কাছ থেকে চলে যাচ্ছেন।
‘একটি শোকসংবাদ’-এ ঘোষণা প্রতিনিয়তই
আমরা শুনে থাকি।
এই
সুন্দর মনভোলানা পৃথিবী থেকে আমরা কেউ যেতে চাই না। আমাদের এক কবি গোলাম মোস্তফার কবিতার
একটি অংশ- ‘মরিতে চাহি না আমি এ সুন্দর ভূবনে’। তারপরও আমাদেরকে
মরে যেতে হয়।
একজন
কাফির মনে করে, মৃত্যু তার চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি, কিন্তু একজন মু’মিন বিশ্বাস করে
যে, মৃত্যু তাকে আর একটি পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং একটি অনন্ত পথে তার যাত্রা শুরু। সেটা
হলো এ জীবনের প্রতিটি ভালো ও মন্দ কাজের বদলা গ্রহণের ক্ষেত্র। পরকালে বিশ্বাস একজন
মানুষের জীবনধারা পাল্টে দেয়।
একজন
মানুষ ইন্তেকাল করলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। জীবদ্দশায় সে যেসব ভালো আমল করে তারই
প্রতিদান সে আখেরাতে পাবে। মৃত্যুর সাথে সাথে তার ব্যাংক-ব্যালেন্স, জমি-জায়গা, ধন-সম্পদ
কিছুই আর তার থাকে না, সবই চলে যায় উত্তরাধিকারদের কাছে।
এ
জন্য আমাদের হায়াতকালে দান-খয়রাতসহ বেশি বেশি নেক কাজ করা দরকার। আর আমরা সম্পদের একটি
অংশ অসিয়ত করে যেতে পারি। মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারদের জন্য জরুরি করণীয় হলো মাইয়াতের
দাফন-কাফন, ঋণ পরিশোধ ও অসিয়ত পূরণ করা।
দাফন-কাফনে অহেতুক বিলম্ব ঠিক নয়। হাদিসের
ভাষায় নেককার হলে দ্রুত তাকে ফল ভোগ করার সুযোগ দান এবং বদকার হলে এ বোঝা যত তাড়াতাড়ি
অপসারণ করা যায়।
জানাযায় শরীক হওয়া মাইয়াতের হক ও মুসলমানদের কর্তব্য। এটা ফরজে কিফায়া।
জানাযা ও দাফন-কাফনে শরীক হওয়াকে অত্যন্ত ফজিলতের কাজ বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। জানাযায়
শরীক হলে এক কিরাত এবং দাফন-কাফনে এক কিরাত অর্থাৎ দু’টি কাজে শরীক
হওয়াতে দু’কিরাত পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে। আর এক কিরাত সমান ওহুদ
পহাড়ের সম পরিমাণ। তাই আমাদের উচিৎ মু’মিদের জানাযা
ও দাফনে স্বতস্ফুর্তভাবে শরীক হওয়া।
মৃত্যুর
পরে আমাদের সমাজে কিছু রুসুম-রেওয়াজ চালু আছে। যেমন দিনক্ষণ ঠিক করে খানা-পিনা ও দোয়া
অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। একজন গরীব বা ভিক্ষুক ভিক্ষে করে হলেও একটি দোয়া অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে। আর ধনী ব্যক্তি হলে তার উত্তরাধিকাররা বিশাল অনুষ্ঠান করে থাকে। কিছু না
করা হলে সমাজে চালু আছে-‘ওর বাপকে গরু পুঁতা করে রেখে আসছে’।
তাই
সামাজিক রেওয়াজ হিসেবেও মানুষ এ সব অনুষ্ঠানাদি করে থাকে। মানুষকে খাওয়ানো অত্যন্ত
উত্তম কাজ। হাদিসে সর্বোত্তম কাজের মধ্যে ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করার কথা বলা হয়েছে।
এ
জন্য আমরা দিনক্ষণ ঠিক না করে সুযোগ মত দরিদ্র মানুষকে খাদ্য খাওয়াব। মনে রাখতে হবে
ইসালে সওয়াব বা মাইয়াতের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত খানা একান্ত মিসকিনদের। এটা সদকা। ধনী
বা সাহেবে নেছাব যারা তাদের এতে কোন অংশ নেই।
আমাদের
অবশ্যই রসূল সা. ও সাহাবাদের আমল দেখতে হবে। আমরা বর্তমান যা করি এমন কিছু তাঁরা করতেন
না। এটা বিধর্মীদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের অনুকরণে আমাদের মাঝে এসেছে। এ সব অনুকরণ অবশ্যই
আমাদের পরিহার করা দরকার।
মৃত্যুর
সাথে সাথে সব আমল বন্ধ হয়ে গেলেও ছদকায়ে জারিয়া এবং দোয়াকারী নেক সন্তানদের দোয়া ও
তাদের নেক আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে। সন্তানের দোয়া কবুল হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ
আল্লাহ নিজেই দোয়া করতে বলেছেন এবং ভাষাও শিখিয়ে দিয়েছেন-‘রাব্বির হামহুমা
কামা রাব্বাইয়ানি ছগিরা’।
আমরা
সর্বদা তাঁদের জন্য দোয়া করতে থাকবো। আর আমরা নফল নামায-রোযা, দরিদ্রদের খাদ্যদান ও
দান-খয়রাত করে তাঁদের জন্য দোয়া করতে পারি। আর নিজেরা কুরআন পাঠ বা দোয়া কালাম পড়ে
তাঁর জন্য নিজে নিজে দোয়া করা যেতে পারে।
মুসলমানদের
অর্থ-সম্পদ অবশ্যই গঠনমূলক কাজে ব্যয় হওয়া দরকার। মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন ও জনহিতকর
যে কোন কাজে ব্যয় করা যেতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে সকল কাজে তাঁর নবীর সুন্নাত অনুসরণের
তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment