আমাদের আদিবাস জুনিয়াদহ ইউনিয়নের গাছিয়া দৌলতপুর গ্রামে। পরবর্তী সময়ে আমরা পার্শ্ববর্তী বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের বাসিন্দা হই। ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততার কারণে গ্রামে যাওয়া হলেও গ্রামের সেই স্মৃতিবিজড়িত গাছিয়া দৌলতপুর জামে মসজিদে যাওয়া হয়ে উঠে না। গতবছর সেখানে উপস্থিত হলে সবাই খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠেন। আবার গতকাল গিয়েছিলাম। সেখানে দাদা ডাকার একজনকে পেলাম এবং কুষ্টিয়া কুওয়াতুল ইসলাম আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত তাঁর ছেলেই মসজিদের ইমাম। চাচাদের সংখ্যাও কম। আমার আব্বার প্রতি ভালোবাসা ও মুহাব্বতের কারণেই আমাদেরকে মানুষ সম্মান করে। আমার আব্বা ছিলেন ঐ মসজিদের খতিব ও সেক্রেটারি। ষাটের দশকে আব্বার উদ্যোগে টিনের ঘর থেকে বিল্ডিং হয়। আনসার আলী মিস্ত্রীর হাতে মসজিদটি নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদে রূপ নিয়েছে নামাজ শেষে আমাদের বন্ধু (১৯৭০ ব্যাচের শিক্ষার্থী) মো. নজরুল ইসলামকে সাথে করে অসুস্থ আমাদের সিনিয়র কাকা মনোরঞ্জন চন্দ্র সরকারকে (সাতবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) দেখে আসলাম। সেখান থেকে চাচাতো ভাইদের বাড়ি, গ্রামে সবচেয়ে বয়স্কা এক দাদি ও এক চাচাকে দেখে বাড়ি ফিরি। আলহামদু লিল্লাহ।
জুমায় আলোচনা
আসসালামু আলাইকুম।
এটিই আমার আদিবাস। দীর্ঘদিন পরে আপনাদের সাথে মিলিত হলাম। আমি নিজে একটু অসুস্থ। আপনাদের কাছে দোওয়া চাই এবং আপনাদের জন্যও দোয়া করি। আমাদের ধর্ম পরস্পর কল্যাণ কামনার ধর্ম।
জুমার দিনে আমাদের প্রধান কাজ হলো নামাজ আদায়। আমরা গোসল শেষে পরিপাটি হয়ে সকাল সকাল আল্লাহর ঘরে হাজির হবো ইনশা -আল্লাহ। আমাদের কারো পক্ষে সম্ভব নয় একটি উট কুরবানি করা। কিন্তু আমরা যদি সকাল সকাল মসজিদে হাজির হতে পারি তাহলে উট/গরু/ছাগল কুরবানির সওয়াব লাভ করতে পারি। আবার প্রথম কাতারে বসার অনেক সওয়াবের কথা আল্লাহর রসুল সা. বলে গেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ যদি বুঝতো প্রথম কাতারে বসার মধ্যে কতো সওয়াব তাহলে লটারি করা লাগতো। তাই আপনারা মসজিদে প্রবেশ করে প্রথম কাতারে বসবেন, তারপর দ্বিতীয় এবং এরপরে তৃতীয়----। কাতার সোজা করা নামাজের শর্ত। নামাজ আমাদের শৃঙ্খলা ও আনুগত্য শেখায়। নামাজে মুসল্লিদের কোনো ভুল নেই। ভুল এক জায়গায় আর সেটি হলো ইমামের আনুগত্যের প্রশ্নে। ইমামের আনুগত্যের ক্ষেত্রে ভুল হলে আর নামাজ হয় না। শুধু নামাজ নয়, আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও আনুগত্য থাকতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা অপরিহার্য এবং থাকতে হবে নেতা বা কর্তৃত্বশীলের আনুগত্য।
নামাজ শুধু জুমারই নয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা আমাদের জন্য ফরজ। ঈমানের পরপরই নামাজের তাগিদ। সকালে ঈমান আনার পরে জোহরে মসজিদে হাজির হয়ে যে নামাজ আদায় করে সে প্রকৃত মুসলিম আর যে নামাজ আদায় করে না সে আমান্যকারী (কাফের)। নামাজ হলো জান্নাতের চাবি। ঘরের চাবি কারো হাতে থাকলে সে আশা করতে পারে যে, সে ঘরে প্রবেশ করবে। তাই যে লোকটি নিয়মিত নামাজ আদায় করে সে জান্নাতের প্রত্যাশা করতেই পারে।
একজন মুমিন দুনিয়ার সব মানুষের জন্য নিরাপদ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। মুমিনই যদি আমরা না হতে পারি তাহলে আমাদের নামাজ-রোজাসহ সকল ইবাদত অনুষ্ঠান অর্থহীন হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। অর্থাৎ মানুষকে যারা হেয় করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, অপমান করে- সেটা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে তার ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহপাক তাদেরকে হুতামায় নিক্ষেপ করবেন আর সেটা হলো আল্লাহর আগুন। তাই মানুষকে সম্মান দিতে হবে। আল্লাহর বান্দাদের সাথে সদাচরণ আল্লাহপাকের খুবই পছন্দ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, জমিনে যারা আছে তাদের সাথে সদাচরণ করো তাহলে আসমানে যিনি (আল্লাহ) আছেন তিনিও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবেন। পথের একজন ভিক্ষুকও সদাচরণের দাবিদার। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিতে না পারলে বিনয়ের সাথে বলুন, ভাই মাফ করো।
জান্নাতে যাওয়ার সহজতম উপায় হলো আল্লাহর বান্দাদের ক্ষমা করা। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে তার ভাইকে ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন। হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধস্পৃহা আমাদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আল্লাহপাক বলেছেন, অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়, কিন্তু কেউ যদি ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়। আল্লাহ কাউকে পুরস্কৃত করতে চাইলে তার আর কিছু কি লাগে? এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বলতে চাই যা আপনাদের সহজে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়ার কারণ হতে পারে। মদিনার মসজিদে রসুলুল্লাহ সা. সাহাবিদের সাথে করে বসে আছেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলে তিনি তার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-দের বলেন, এই মুহূর্তে যে প্রবেশ করছে সে জান্নাতি। এভাবে তিনি পরপর তিনদিন একই ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, সে জান্নাতি। রসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে একজন সাহাবির জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি তার ঘরে তিনদিনের জন্য মেহমান হন। এই তিনদিন তিনি তাঁর মাঝে বাড়তি কিছুই লক্ষ করেন না, একেবারে স্বাভাবিক জীবন। শেষে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, রসুলুল্লাহ সা. পরপর তিনদিন আপনাকে জান্নাতি বলে ঘোষণা দিলেন অথচ আপনার মাঝে বাড়তি কোনো আমলই লক্ষ করলাম না। জবাবে সেই সাহাবি বললেন, ভাই আমি তো এমন কোনো আমল করি না যা দ্বারা এভাবে সম্মানিত হবো। তবে প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে দোয়া-দরুদ পড়ার পর সবাইকে ক্ষমা করে দেই, কারো প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রাখি না। তখন সেই সাহাবি বললেন, আপনার এই হিংসামুক্ত জীবন ও ক্ষমাশীলতাই আপনাকে এতো মর্যাদাবান করেছে।
হিংসা বড়ো সর্বনাশা। হিংসা কেবল কবিরা গুনাহ নয়। হিংসা অতীতের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বলিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। সুরা ফালাকে আল্লাহপাক হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। বিশেষ বিশেষ দিনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন, কিন্তু ক্ষমা থেকে বাদ পড়ে সে ব্যক্তি যে শিরক করে ও মানুষের সাথে হিংসা করে। আল্লাহপাক আমাদের হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর বান্দাদের সাথে সদাচরণ করার তৌফিক দান করুন। ০৮.০৭.২০২৩
Comments
Post a Comment