Skip to main content

প্রসঙ্গ যৌথ পরিবার



গত পরশু রাতে আমাকে একজন (কলেজের অধ্যাপক) ফোন দিয়ে জানালেন, স্যার, যৌথ পরিবার নিয়ে কিছু লিখুন। জবাবে বললাম, আমি এখন খুব ব্যস্ত, পরে সময়-সুযোগ করে লিখবো ইনশা-আল্লাহ।
আমার প্রশ্ন- আসলেই কি বাবা-মা সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে পড়েছে।? পিতা-মাতার কাছে সন্তান যেমন সম্পদ, পিতা-মাতাও সন্তানের কাছে তেমনি সম্পদ। জান্নাতে যাওয়ার সহজ মাধ্যম হলো তার পিতা-মাতা। পরিবার যৌথ না একক এটা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। দুটোই ইসলামসম্মত। এটা নির্ভর করে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে। কোনো পরিবারে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী থাকলে অবশ্যম্ভাবী তাঁরা গুরুত্বের দাবীদার। স্ত্রী ও সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যেমন একজন পুরুষের; তেমনি তার পিতা-মাতা বা উর্ধতন কেউ থাকলেও তারও খাদ্য, চিকিৎসাসহ সকল প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব তার।
পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদিসের বর্ণনা শর্তহীন। সমস্যা দেখা দিয়েছে অনেক মহিলা শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা তাদের দায়িত্বের অংশ মনে করেন না। আল্লাহপাক অর্থ উপার্জনের দায়িত্বটা মূলত পুরুষের ওপর অর্পণ করেছেন এবং মহিলাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র হলো গৃহ। গৃহে সার্বক্ষণিক অবস্থানরত পুত্রবধু শ্বশুর-শাশুড়িকে সহ্য করতে না পারলে স্বাভাবিকভাবে ছেলের জন্য সেটা বিপদজনক হয়ে পড়ে। অনেকে আবার মনে করে শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করার কথা কুরআন-হাদিসে নেই। যদি কুরআন হাদিসে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থেকেই থাকে তাহলে বুঝতে হবে মর্যাদাগতভাবে পিতা-মাতা ও শ্বশুর-শাশুড়ির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ফিতরাতের ধর্ম ইসলামে সেটা আলাদা উল্লেখের প্রয়োজন পড়েনি। তবে আমি এটা বলতে পারি কোনো মহিলা যদি তার শ্বশুর-শাশুড়িকে সহ্য করতে না পারে তবে তার এ আচরণই স্বামী থেকে তালাক পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। বৈধ কাজের মধ্যে তালাক ইসলামে সবচেয়ে অপছন্দনীয়। এই অপছন্দনীয় কাজটি পিতা-মাতার সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে।
কোন পুরুষের পিতা-মাতা ও স্ত্রীর মধ্যে অগ্রাধিকার প্রশ্নে যদি মা কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলেও সেই সন্তানের জান্নাতে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। পিতা-মাতা কষ্ট পান এমন কোনো ধরনের আচরণই সন্তান করতে পারে না। কুরআনের ভাষায় উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করা যায় না। পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন এমন কি বাসায় কাজের লোক সবারই অধিকার রয়েছে উত্তম আচরণ প্রাপ্তির। বাসায় পশু-পাখি ও জীব-জানোয়ার থাকলে তাদেরও অধিকার উপেক্ষা করা যাবে না। ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের তাগিদ দেয়; সেখানে সকলের অধিকার স্বীকৃত এবং কোনো বিশেষ ব্যক্তির প্রতি ঝুঁকে পড়ে অপরের অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না। আবার মনে রাখতে হবে আজকের বধু আগামীকালের শাশুড়ি। হাদিসের বাণী, যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।
সন্তান একাধিক হলে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের জন্য দিন ভাগ করাটাও তাদের মর্যাদার খেলাপ। পিতা-মাতা যেটা চাবে, যেভাবে চাবে সেটা করাই সন্তানের দায়িত্ব। তাঁদের খুশিমত চলার সুযোগ করে দিতে হবে; এমন কি তাঁরা নিজ ভিটে থাকতে চাইলে সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সব নিয়ে পরবর্তীতে সময়-সুযোগ করে লিখবো ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহপাক আমাদেরকে পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখি জীবন-যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।


Comments