ব্যতিক্রমধর্মী বলছি এ কারণেই যে বর্তমানে
বিয়ে মানেই জমকালো সাজে নারী-পুরুষের একত্রে হৈ-হুল্লোড়,মহরানা নিয়ে বাক-বিতন্ডা,গায়ে
হলুদ ও গান-বাজনাসহ নানা আচার-অনুষ্ঠান। অথচ ইসলামে বিয়েকে খুব সহজ করা হয়েছে।দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দু’জন বয়োপ্রাপ্ত নর-নারী পরস্পর ইজাব কবুল
(স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরস্পরকে মেনে নেয়া)করার মধ্য দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়;অবশ্যই তা
মহল্লাবাসীকে জানাতে হয়। এমনি একটি বিয়ে সুসম্পন্ন হলো গতকাল বাদ জোহর দক্ষিণ কল্যাণপুর
বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে।(অবশ্য আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েও মসজিদে (কাটাবন মসজিদে)সম্পন্ন
হয়েছিল এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল আমার জামাই-এর আগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায়)।আমাদের সিফাত ইন্টারন্যাশনাল
স্কুলের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুহাঃ মুজিবুল হকের ডাক্তার মেয়ের (ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের
লেকচারার)বিয়ের আয়োজনটা ছিল একান্ত অনাড়ম্বর ও পবিত্র পরিবেশে। বিয়ে উপলক্ষে খতিব মহোদয়
ও ইমাম সাহেবের খুতবাহও ছিল বড় আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়।জামাই একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং বাড়ি
বগুড়ায়। মেয়ের পিতা তাঁর বক্তব্যে সবার কাছে দোয়া চাইলেন যেন তাঁর মেয়ে তার শ্বশুর
বাড়ির সবাইকে আপন করে নিতে পারেন এবং তাঁর জামাইও যেন তাঁদেরকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা
প্রদান করে চলতে পারেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ে বড় এবং ছেলে কুরআনে হাফেজ ও আলিমে
গোল্ডেন পেয়ে মালোয়েশিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে অনার্সে অধ্যয়নরত।গত বছর গোটা পরিবার
হজ্ব করে এসেছেন।তাঁর ইচ্ছা তাঁদের মেয়ে-জামাই-এর বাসর হবে পবিত্র মক্কায় এবং ওমরা
উদ্দেশ্যে শীঘ্রই তারা মক্কা-মদীনায় যাত্রা করবেন। আমরা আল্লাহতায়ালার দরবারে নবদম্পতির
দুনিয়া ও আখিরাতে অশেষ কল্যাণ কামনা করি। আল্লাহপাক যেন তাদেরকে তাঁর পূর্ণ হেফাজতে
গ্রহণ করেন। আমিন।
একটি বিয়ের খুতবা
গত ১২ই রবিউল আওয়ালে দক্ষিণ কল্যাণপুর
বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে বাদ জহুর একটি বিয়ে সুসম্পন্ন হয়।বিয়ের পূর্বে মসজিদের
ইমাম মাওলানা রেদওয়ানুল ইসলাম আল্লাহর ঘরে নবীর সুন্নত একটি বিয়ে অনুষ্ঠান ইসলামী শরীয়া
অনুসরণ করে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে বিধায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন।তিনি বিয়েকে
নবী (সা.)-এর সুন্নাত উল্লেখ করে বলেন যে ছেলেমেয়ে বয়োপ্রাপ্ত হলে পিতামাতার উচিৎ তাদেরকে
বিয়ে সুসম্পন্ন করে দেয়া। আর আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলে ছেলেমেয়েদের উচিৎ রোযা রাখা।তিনি
হাদিস উল্লেখ করে আরো বলেন, বিয়ে হলো ধর্মের অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক রয়েছে তাকওয়ায়।
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন পাপের বড় উৎস হলো লজ্জাস্থান ও পেট। বিয়ের মাধ্যমে লজ্জাস্থানের
হেফাজত হয় এবং পেট চায় বেশি পেতে,বেশি খেতে।মানুষ হালাল-হারাম বাছবিচার না করে উদর
পূর্তি করতে চায় এবং তাকওয়া (আল্লাহর ভয়)-ই মানুষকে অবৈধ উপার্জন থেকে হেফাজত করে।বিয়েতে
মহরানা আদায় ফরজ এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে আদায় করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।
সামাজিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য বেশি মহরানা নির্ধারণ না করে সামর্থানুসারে মহরানা
নির্ধারণ করার জন্য বলেন।বিয়ের রাতে স্ত্রীর কাছে মহরানা মাফ চেয়ে নেয়াকে অত্যন্ত ঘৃণ্য,
লজ্জাজনক ও ডাকাতি বলে উল্লেখ করেন।একটি নতুন পরিবেশে নতুন জীবন শুরু করার প্রাক্কালে
স্বামী এমন প্রস্তাব রাখলে স্ত্রীর পক্ষে না বলাটা তখন আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। উদাহরণ
হিসেবে বলেন,এক কৃষক গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে সশস্ত্র ডাকাত কর্তৃক লুণ্ঠিত হন।ডাকাত
কিছুদূর যাওয়ার পর ফিরে এসে সেই কৃষককে বলে, ‘ভাই তুমি আমাকে মন থেকে মাফ করে দাও’। কৃষক জান বাঁচানোর তাগিদে ভয়ে ভয়ে
বলে, আচ্ছা মাফ করে দিলাম। বিয়ের রাতে মহরানা মাফ চেয়ে নেয়া যেন এমনই।
খতিব মাওলানা আবু তাহের জিহাদী রসূল (সা.)-এর
হাদিস উল্লেখ করে বলেন, বিয়ের ক্ষেত্রে মানুষ সম্পদ, বংশ,সৌন্দয ও ধার্মিকতা তালাশ
করে।রসূল (সা.) ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন তাহলে তোমার ভবিষ্যৎ
শুভ হবে।তিনি কয়েকটি উদাহরণ পেশ করে বলেন দেওবন্দের এক উস্তাদের মেয়ের বিয়েতে যে ছেলের
নামাযে তিনি বেশি খুশু-খুজু পেলেন তাকেই পছন্দ করলেন যদিও ছেলেটির পিতা ছিলেন নিতান্ত
দরিদ্র। কিন্তু দেখা গেল সেই ছেলে এবং তাঁর ঘরের সন্তানরা পারবর্তীতে জগতবিখ্যাত হন।
তাই তিনি বিয়ের ক্ষেত্রে ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।এই
বিয়েতে আল্লাহপাকের রহমত ও করুণা অজস্রধারায় বর্ষিত হোক সবাইকে সাথে তিনি সেটা কামনা
করেন।
Comments
Post a Comment